
একসময় যেখানে বইয়ের ঘ্রাণে ভরত বাতাস, পাঠকদের পদচারণায় মুখর থাকত পাঠাগার চত্বর—সেই কেন্দুয়ার উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি আজ নিস্তব্ধ, ধুলিধূসরিত ও প্রায় অচল। অবহেলা, অযত্ন আর দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তায় জ্ঞানের এই কেন্দ্রটি ধুঁকছে অস্তিত্ব সংকটে।
বর্তমানে লাইব্রেরির কক্ষের চারপাশে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা, দরজায় সারাদিন ঝুলে থাকে তালা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে এই স্থানটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
দুই যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি একসময় ছিল প্রাণবন্ত। ছাত্র, শিক্ষক, সাহিত্যপ্রেমী ও সাধারণ পাঠকদের ভিড়ে মুখর থাকত প্রতিদিন। কিন্তু পুরাতন উপজেলা পাবলিক হল পুনঃনির্মাণের সময় লাইব্রেরিটি স্থানান্তর করা হয় উপজেলা পরিষদের কোর্ট ভবনের এক কক্ষে—এর পর থেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় প্রাণচাঞ্চল্য।
উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা এই লাইব্রেরির কার্যক্রম এখন প্রায় বন্ধ। স্থানীয়দের দাবি, অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ থাকলেও লাইব্রেরি সংস্কার বা আধুনিকায়নে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন,ছোটবেলায় নিয়মিত বই পড়তে যেতাম সেখানে। এখন দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। অবহেলার কারণেই আজ লাইব্রেরিটি প্রায় অচল হয়ে গেছে।”
কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সেলিম বলেন,একটি পাবলিক লাইব্রেরি কেবল বই রাখার স্থান নয়—এটি সমাজে জ্ঞানচর্চা ও চিন্তার আলো ছড়ায়। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে লাইব্রেরিটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হোক।”
বিএনপি নেতা ও উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদুল হক ফারুক বলেন, এই লাইব্রেরিটির একসময় বেশ জৌলুশ ছিল। আমি নির্বাচিত হয়ে বহুদিন দায়িত্ব পালন করেছি। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত আছে। আমি চাই মৃতপ্রায় এই লাইব্রেরিটি আবার সচল হোক।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, “লাইব্রেরির বিষয়ে নথিপত্র দেখে বলতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
জ্ঞানের আলো ছড়ানোর সেই বাতিঘর আজ অবহেলায় নিভে যাওয়ার পথে। তবে সচেতন মহলের আশা, অল্প উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় আবারও আলোকিত হতে পারে কেন্দুয়ার একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরি।