
নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর বিশাল হাওরাঞ্চলে একসময় প্রচুর দেশীয় মাছ ও জলজ উদ্ভিদের সমাহার থাকলেও বর্তমানে সেগুলো প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। হাওরের ২৮টি বিস্তৃত জলাভূমি এবং প্রায় ২৩ হাজার ৭৮১ হেক্টর আয়তনের মধ্যে এখন আর আগের মতো পাবদা, গুতুম, কই, রানী, ভেদা, গাগট, বোয়াল, ভাইলারা, টেংরা, লাটি মাছসহ বহু প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু মাছই নয়, পানির ভেতর জন্মানো নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ যেমন—পাটখড়ি, শেওলা, কুইশাখ, কেউরালী ইত্যাদিও এখন আর দেখা যায় না। এ কারণে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের অভিযোগ, ধানের জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হাওরের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে মাছের ডিম ও পোনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, জলজ উদ্ভিদও টিকে থাকতে পারছে না। জেলেরা জানান, আগে মৌসুমে জাল ফেললে প্রচুর মাছ ও শেওলা ধরা পড়ত, কিন্তু এখন জালে কিছুই আসে না। এতে তারা জীবিকা সংকটে পড়েছেন।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে খালিয়াজুরীর হাওরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। তারা কৃষিতে জৈব সার ও বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানো, রাসায়নিক কীটনাশকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছের পোনা ও উদ্ভিদ পুনরুদ্ধার, এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার ওপর জোর দিয়েছেন।
খালিয়াজুরীর ২৮টি হাওর একসময় এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার প্রধান ভরসা ছিল। কিন্তু এখন দেশীয় মাছ ও জলজ উদ্ভিদ বিলীন হয়ে যাওয়ায় হাওরবাসী চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।