ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বর্তমান হারুন পার্কে বিশাল জনসভায় পাকিস্তানের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া। তিনি ১৯৪৯ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ঢাকায় প্রথম সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা ও নির্দেশে ১৯৫০ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গৌরীপুর থানা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে পাক সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়ে গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘ ৯ মাস কারাবরণ করেন। তিনি গৌরীপুর আর কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও রামগোপালপুর পি, জে,কে উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্রসহ বিভিন্ন এলাকার ছাত্রদের সাথে মিছিল মিটিং করে সংগবদ্ধ করতেন। ২১ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে গিয়ে গৌরীপুর বাজার ময়দানে ইট সাজিয়ে তাতে লালসালু কাপড়ে ঢেকে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছিলেন। সে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ হামলা চালিয়ে শহিদ মিনার ভেঙ্গে দেয়।
এর পর ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে এ,কে ফজলুল হকের টিকাটুলিস্থ বাসায় আলোচনায় যোগদানের সুযোগ পান। ১৯৫৩ সালের ১৩ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু সহ অনেক জাতীয় নেতা তাঁর আমন্ত্রণে গৌরীপুরে আওয়ামী মুসলিম লীগের জনসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে আবারো তিনি জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কারণে তিনি পথসভায় গ্রেফতার হন । ১৯৭০ সালে নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য( এমপিএ) হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের স্বাক্ষর করেন। উনার পরিবার তথা গৌরীপুরবাসীর দাবি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তি হাতেম আলী মিয়ার নাম বাংলাদেশের মানুষ যেন সারাজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সরকারিভাবে তার যেন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য এই বছর তিনি ভাষা সৈনিক হিসেবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মান সূচক মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।