আজ ১১ জুলাই, ভালোবাসার কবি তানভীর জাহান চৌধুরী ‘র শুভ জন্মদিন। ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই শুক্রবার ভোর ০৪ঃ৪৫ মিনিটে নিজ পিত্রালয় নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া এক সাহিত্যানুরাগী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি মরহুম কায়সার জাহান চৌধুরী ও রেহেনা চৌধুরী’র দুই সন্তান (এক পুত্র, এক কন্যা) এর মধ্যে একমাত্র পুত্র সন্তান৷ তিনি বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খালেকদাদ চৌধুরী’র দৌহিত্র ।
ভালোবাসার কবি তানভীর জাহান চৌধুরী–প্রবহমান নদীর মতো স্বতঃস্ফূর্ত খরস্রোতা কবি ; তিনি মরমের কবি, জীবনের কবি, প্রেম ও বিরহের কবি ; তাঁর বিপুল সংখ্যক পাঠক ইতোমধ্যে তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন—বিশেষ অভিধায়, ‘ভালোবাসার কবি’ হিসেবে। ভালোবাসার কবি তানভীর জাহান চৌধুরী—বংশানুক্রমিক ধারায় তাঁর রক্তের ভেতরে আছে ‘সাহিত্যের অনুরণন। তিনি ‘উত্তর আকাশ’-এর দীপ্তিময় নক্ষত্র, বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার-ভূষিত এবং একুশের পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর একমাত্র পৌত্র।
স্বীকার করতেই হবে যে, খালেকদাদ চৌধুরীর ছায়াতলে বসেও–তানভীর জাহান চৌধুরী স্বকীয় প্রতিভায় দ্যুতিময়, ভাব ও ভাবনায় স্বতন্ত্র-পথের যাত্রী ; তাঁর কবিতাকে ঘিরে তরুণ-সমাজের মধ্যে ‘সাহিত্য-উন্মাদনা’ ব্যাপক। কবিতা-বিরাগ সমাজের মধ্যে বসেও তাঁর কাব্যের রয়েছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। ভালোবাসার কবি তানভীর জাহান চৌধুরীর লেখা চারটি কাব্য ‘ভালোবাসার প্রতিশোধ ভালোবাসাই নেবে’ (২০১৮), ‘ভালোবাসা সয় না আমার দুঃখ হয় না পর’(২০১৯) মন ধুয়ে নেই জলে (২০২০) একটি বিকেল ধার দিয়েছি (২০২১) ইতোমধ্যেই পাঠক হৃদয় আন্দোলিত করে বহুবার মুদ্রিত হয়েছে। বস্তুত প্রেম ও ভালোবাসা-প্রকাশে কবি খুব নির্ভীক, প্রত্যয়দীপ্ত– ভালো লাগে বলেই তো ভালোবাসি ভালোবাসি বলেই তো কাছে আসি কাছে আসি বলেই তো এতো যন্ত্রণা যন্ত্রণাও তোমাকে ভুলাতে পারে না।— [ভালোবাসাকে ভালোবাসি] প্রেম-ভালোবাসার জন্ম ও প্রকৃতি সম্পর্কে কবি তানভীর জাহান চৌধুরীর রয়েছে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট অভিমত– জমির দখল লাঠিতে হয় প্রেমের দখল মনে আমার দখল নিতে হলে আইসো সঙ্গোপনে।
এখানে একটা কথা বিশেষ গুরুত্বসহ উল্লেখ করতে চাই, যে-প্রেম ও ভালোবাসার বন্দনাগীতে তানভীর জাহান চৌধুরীর রয়েছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস, সেই উচ্ছ্বাসের গভীরেই রয়েছে তাঁর দুঃখ-যন্ত্রণা ও বিরহের আর্তনাদ। তাঁর মিলনের আনন্দ, প্রেমের মাহেন্দ্রক্ষণ—এর স্থায়িত্ব ছিল কমই ; কারণ সেদিন আমি তাকে ধরে রাখতে পারিনি কারণ ভরণ-পোষণের ক্ষমতা আমার ছিলো না যদিও ভালোবাসার অদম্য সাহস ছিলো বুকে তবুও পারিনি সমাজ-সামাজিকতার নির্মম চাপে।
[পৃথিবীর অপ্রেমিক মানুষগুলো] প্রেম ও প্রকৃতি, ভালোবাসা এবং বিরহ-বন্দনা, তানভীর জাহান চৌধুরীর কবিতার মূল প্রতিপাদ্য হলেও, একজন প্রকৃত কবির অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিনি সমাজ ও স্বদেশকে অবলোকন করেছেন। বর্তমান সমাজের নষ্টামি-ভণ্ডামি-শঠতা-ধূর্ততা দেখে তাঁর কবিচিত্ত বেদনার্ত– বিবেক বলে কিচ্ছু নাই বিবেক এখন ছাই বিবেক শুধু জাগ্রত হয় লোক দেখানোর দায়।
[ বিবেক] স্বদেশ-প্রেমের অমলিন ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে কবির কণ্ঠে দৃপ্ত উচ্চারণ– সবুজ ঘাসে রক্তের দাগ আজও ঘুচেনি বুকের জ্বালা মা-মানচিত্রে হাত দেবে এত সাহস রাখে কোন শালা। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান মনীষী, পণ্ডিত হুমায়ুন আজাদ একদা খেদ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তিরিশের কবিতায় অন্ত্যমিলের ব্যবহার হয়েছে প্রচুর কিন্তু বর্তমানকালের কবিরা অন্ত্যমিলকে অনাধুনিক ভেবে তা সচেতনভাবে পরিহার করে যাচ্ছেন ; কিন্তু বাংলা কাব্যে গতি ও বৈচিত্র্য আনবার জন্যে ওই অন্ত্যমিল এবং ছন্দ-ব্যবহার প্রয়োজন। যা ভালোবাসার কবি’র কাব্যে আমরা লক্ষ্য করি। বস্তুত ভালোবাসার কবি তানভীর জাহান চৌধুরী’র কবিতা রূপে-রসে-বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে মনোময়। এ তো গেল কাব্যের কথা উপন্যাসিক হিসাবে তানভীর জাহান চৌধুরী জনপ্রিয়তা কম নয়। একটি উপন্যাসেই তাকে উপন্যাসিক হিসাবে খ্যাতি দিয়েছে। “ঘর বাঁধলেই ভালোবাসা হয় না” বাস্তবধর্মী এই উপন্যাসটিও ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে যে কারণে বারবার মুদ্রিত হয়েছে উপন্যাসটি।