নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বরখাপন ইউনিয়নের নাগারগাতী একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা,ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ দুর্নীতি,বিদ্যালয়ের ব্যাপক অনিয়ম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে পদত্যাগের হুমকির অভিযোগে বিদ্যলয়ে ১১ ফেব্রুয়ারী রবিবার বেলা ১২ টার দিকে
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বরখাপন ইউনিয়নের নাগারগাতী একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি ও সভাপতিকে পদত্যাগের হুমকির অভিযোগে বিদ্যলয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিল ভৌমিক এর নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও নাগারগাতী এলাকাবাসীর আয়োজনে এ মানববন্ধন পালিত হয়।
এ ব্যাপারে অনিল ভৌমিক জানান, ‘প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তন্মধ্যে শিক্ষার্থীর নিকট হইতে ভর্তি ফি বেতন ফি, সেশন ফি, রেজি: ফি, এস.এস.সি ফরম ফিলাপ ফি পরিচালনা কমিটির রেজুলেশন ব্যতীত নিজ ইচ্ছামত ধার্য্য ও আদায় করে থাকেন। আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে খরচ করেন এবং ক্যাশবহি ও জমা খরচ বহিতে লিপিবদ্ধ করেন না। গরিব, অসহায় ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের অভিভাবক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমানের নিকট বেতন মওকুফ /হাফ ফি/ ফুল ফি এর বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাদের সাথে অশালীন/ ঔদ্ধত আচরণ করেন।
তিনি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন দুর্নীতি ও বেপরোয়া আচরণ করে আসছেন। এই দুর্নীতি ও বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটি অনেকবার মৌখিকভাবে সতর্ক করেন।কিন্তু প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার কিছুতেই থামছে না,আমরা এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।
তিনি আরও বলেন বর্তমান পরিচালনা কমিটি কর্তৃক রেজুলেশন অনুমোদন না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোন প্রজ্ঞাপন না মেনে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন আয়া, একজন অফিস সহায়ক, নিয়োগ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজের পছন্দমত প্রার্থীর কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের উপর রেজুলেশন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। ২১/০১/২০২৪ খ্রি. তারিখে সভাপতি অনিল ভৌমিক এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে পরামর্শ করবেন বললে, প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং রাগান্বিত হয়ে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করতে থাকেন এবং পূর্বপরিকল্পিত কম্পিটার টাইপ করা” সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ পত্র” নিজ ব্যাগ থেকে বের করে স্বাক্ষর করতে বলেন এবং আরও বলেন আজ এই পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর না করলে, বিদ্যালয় থেকে বের হতে দিবেন না বলে আটকিয়ে রাখেন। ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবকের সহায়তায় বিদ্যালয় থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন বলে জানান তিনি। পরে আরো হুমকি প্রদান করেন যে, বিদ্যালয়ের মাঠে ও আঙ্গিনায় আসতে দিবেন না।
এ ব্যাপারে তিনি আরও জানান, তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন কিন্তু বিষয়টির কোন সমাধান অদ্যাবধি হয়নি। তাই এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধন করছেন।
মানববন্ধন চলাকালীন একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর অভিভাবক বুলবুল মিয়া বলেন, আমার ছেলের ভর্তির জন্য হেড মাস্টারের নিকট গেলে তিনি আমার কাছে সাড়ে চার হাজার টাকা দিলে ভর্তি নিবেন বলে জানায়, আমি এক হাজার টাকা দিয়ে আসি। তারপর আমার ছেলের পরীক্ষা নিয়ে বলেন আমার ছেলে ফেল করেছে, তাই তাকে ভর্তি করা যাবে না, টাকা দিলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করবেন। আমি টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় আমার ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সাখাওয়াত আকন্দ বলেন, ‘এই প্রধান শিক্ষক অত্যন্ত দুর্নীতিবাজ, অভিভাবকদের সাথে বাজে আচরণ করেন, উনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই এক ছাত্রদের নামে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়। এই প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।’
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে না থাকায় মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাকেসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।