কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের দূর্গ বলে পরিচিত। এ উপজেলাটি ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। কেন্দুয়ায় বিগত ইউপি নির্বাচনে ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩ টি ইউনিয়নে নৌকার জয় হয়েছিল আর ১০ টি ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় হয়েছিল। তবে এ পরাজয়ের কি কারণ ছিল? আগামীদিনের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কেমন প্রার্থীরা মনোনীত হবে? প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকের নির্বাচনে জয়-পরাজয় কি হবে?
এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় – এ উপজেলা আওয়ামীলীগের দূর্গ বলে পরিচিত হলেও বিগতদিনে ইউপি নির্বাচনে ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩ টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিজয় হয়েছিল। নৌকা প্রতীকের বিজয় হওয়া ৩ টি ইউনিয়ন হল গন্ডা, সান্দিকোনা, মোজাফরপুর ইউনিয়ন। একই সাথে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় হয়েছিল ৩ টি ইউনিয়নে যথাক্রমে বলাইশিমুল, কান্দিউড়া, চিরাং ইউনিয়ন। বাকী ৭ টি ইউনিয়নের মধ্যে মাস্কায় বিএনপির একাংশের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্যান্য ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে আশুজিয়া, দলপা, গড়াডোবা, নওপাড়া, রোয়াইলবাড়ী, পাইকুড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীগণ স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ফলে সর্বমোট ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ টি ইউনিয়নেই নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি ঘটে।
তখনকার সময়ে আওয়ামীলীগের সাংসদসহ বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ ইউনিয়নেও ঘটে নৌকার ভরাডুবি। যা মেনে নেওয়া আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ছিল! এখনো সেই কষ্ট বহন করতে হচ্ছে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের!
বিগত দিনে ইউপি নির্বাচনে কেন নৌকার এমন তুমুল পরাজয় ঘটেছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত সরেজমিনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি তা হল-বিগত দিনে ইউপি নির্বাচনের মাঠে কেন্দুয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দ্বিমুখী ত্রিমুখী হয়ে পড়ে। ফলে অনেক নেতা নৌকার পক্ষে কাজ করলেও, কিছু নেতা প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতা করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন। দিনে নৌকার পক্ষে কাজ করলেও রাতের আধারে অনেক নেতা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। দলীয় লোকের এই লুকোচুরির কারণেই নৌকার ভরাডুবি হয়েছে বলে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী মত প্রকাশ করেছেন। তবে বিগত দিনে ইউপি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকা’র এ পরাজয় কেন্দুয়ার অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আজো মেনে নিতে পারছেন না।
এছাড়াও অনেক তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব,দলীয় গ্রুপিং,ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন,বিভিন্ন কমিটি গঠনে ত্যাগীদের বঞ্চিত করা,দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাবে বিগত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার এমন ভরাডুবি হয়েছিল। তবে অনেকেই বলেছেন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পর ও এত উন্নয়ন করার পরও ১০ ইউনিয়নে নৌকার এমন ভরাডুবি হবে তা আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি।
তবে অধিকাংশ ভোটাররা বলেছেন এক দুটি ইউনিয়ন রয়েছে। যেখানে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মানতেই পারেনি এমন ব্যক্তিকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ফলে ওই এক দুটো ইউনিয়নে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের অপছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ায়; ওই এক দুটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সত্বেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর চেয়ে অধিক গ্রহণ যোগ্য হওয়ায়-ওই এক দুটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় হয়েছে।
বাকী যে সকল ইউনিয়ন গুলোতে নৌকার প্রার্থী গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি হওয়া সত্বেও পরাজিত হয়েছে। সেসব ইউনিয়নে বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির কারণ হিসেবে অনেকেই উল্লেখ করেছেন-নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর আওয়ামীলীগ থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামীলীগের ঐক্যে ফাটল ধরে এবং সরাসরি উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের বিরোধিতার ফলে আওয়ামীলীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত হলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের হয়েছে পরাজয়।
কেন্দুয়া উপজেলায় আগামীদিনে ইউপি নির্বাচনে কি অতীতের ঘটনার মত হবে নাকি ভিন্ন কিছু ঘটবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলেছেন অতীতে নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করে, আওয়ামীলীগের প্রবীন ও আওয়ামী সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে কোনভাবেই আগামীদিনে নৌকা প্রতীকের পরাজয় ঘটবে না। সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ও যোগ্য নেতা নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হলে এবারও বেশ কিছু ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অগ্রীম ঘোষণা বিদ্যমান। যা সঠিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে ব্যর্থতার কারণে এমন হতে পারে।
আগামীদিনের ইউপি নির্বাচনে ব্যাক্তি ও প্রতীকের সঠিক সমন্বয়ের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে! ব্যাক্তি ও প্রতীকের সমন্বয়সহ এলাকাভিত্তিক একটি হিসাবও থাকে। অতীতের কালিমা মুছে নৌকা প্রতীকের ফলাফল ভালো করতে হলে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যের বিকল্প নেই।
আগামীদিনে বর্তমান সময়ের আওয়ামীলীগের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভিভাবক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী প্রার্থী মনোনীত করতে ব্যর্থ হলেও আবারও অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ১৩ টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থীদের ভবিষ্যত বিজয় নিশ্চিত করতে; সকল প্রকার গ্রুপিংয়ের উর্ধ্বে থেকে, সকল নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ ভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে । আওয়ামীলীগের প্রাণ তৃণমূলের ত্যাগী ও সকল নেতৃবৃন্দের যথাযথ মূল্যায়ন করে আগামীদিনে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। তবেই অতীতের কালিমা মুক্ত হয়ে কেন্দুয়া আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে তার পূর্বরূপ ফিরে পাবে। আগামীদিনে কেন্দুয়া উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় হলে “কেন্দুয়ার মাটি, আওয়ামীলীগের ঘাঁটি” শ্লোগানটির সার্থক প্রয়োগ হবে। আগামী ইউপি নির্বাচনে সর্বাধিক সৎ- যোগ্য ও ত্যাগী নেতাগণ নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনীত হোক এবং কেন্দুয়ার সকল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হোক-এই প্রত্যাশা রইলো।