নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের ছিলিমপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃত একটি খালের ওপর মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করে একটি মাদরাসা নির্মাণের জন্য ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছেন বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা সামসুল কবীর খান নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
এ ঘটনায় ছিলিমপুর গ্রামের নূর মিয়া নামে এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ছিলিমপুর গ্রামের একপাশে কুড়ুয়া বিল ও অন্য পাশে মরাবিল রয়েছে। শত বছর যাবত গ্রামের পানি ওই খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে আসছে। এরইমধ্যে সম্প্রতি সামসুল কবীর খান তার নিজস্ব জায়গায় মাদরাসা নির্মাণের জন্য ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহনের লক্ষ্যে খালটির ওপর মাটি ফেলে সাময়িক রাস্তা তৈরি করেছেন এবং ওই খালের জায়গায় স্থায়ীভাবে রাস্তা নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন।
অভিযোগকারী নূর মিয়া বলেন, দীর্ঘদিনের পুরনো এ খালটি বন্ধ করে রাস্তা তৈরি করায় কমপক্ষে ২৫০টি পরিবার চরম হুমকিতে আছি। কারণ এ খাল দিয়েই আমাদের এলাকার পানি বিলে নিষ্কাশিত হয়। আমাদের দাবি, খালের ওপরে রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ করা হোক এবং খালটি উদ্ধার করে অবিলম্বে তা খনন করে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এদিকে মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সরজমিনে গেলে কথা হয় এলাকা লোকজনের সাথে। এ সময় গ্রামটির বাসিন্দা মতিউর রহমান, আব্দুল আউয়াল, ইয়ার খান, ইব্রাহিম ভূইয়া খালটি রক্ষার দাবি জানিয়ে দ্রুত খাল খননের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
তবে গ্রামের বাসিন্দা তুষার কবির খান, আবু হানিফ, আবু সিদ্দিক বলেন, গ্রামের দুই পাড়ার মানুষের চলাচলের স্বার্থে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য রাস্তা ও ড্রেন দুটোই নির্মাণ করা হলে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধা হবে।
চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা এনামুল কবীর খান বলেন, আমার জানামতে এটা কোনো সময়ই খাল ছিল না। এটি সরকারি একটি হালট। যা দুই পাশের লোকজনের দখলে রয়েছে। আমরা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে হালটটি উদ্ধার করে হালটের দুই পাশে খুঁটি বসানোর ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কোনো একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের চলাচলের স্বার্থে ওই হালটে রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করার জন্য ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করেছি।
অভিযুক্ত সামসুল কবীর খানের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু ষড়যন্ত্রকারী আমার বিরুদ্ধে এরকম মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। আমি গ্রামের উপকার করতে চাই। ক্ষতি করার চিন্তাও করি না কখনও।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সার্ভেয়ার গিয়ে জায়গার দুইপাশে খুঁটি পুঁতে দিয়েছে। সরকারি কাগজে ওই জায়গাটির শ্রেণি খাল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। ইচ্ছে করলেই কেউ এখানে রাস্তা করতে পারবে না। এটা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থাতেই থাকবে।