নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার নবাগত ইউএনও মাহমুূূদা বেগম। তিনি গত ২৭ মার্চ কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি কর্মস্থলে দায়িত্বভার বুঝে নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। কেন্দুয়ায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পূর্বে মাহমুদা বেগম জামালপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কর্মরত ছিলেন। জামালপুরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার সাহসী ম্যাজিস্ট্রেট ‘এসিল্যান্ড আপা’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন ।
সততার মূর্ত প্রতীক হয়ে সেখানে বিভিন্ন সাহসী অভিযান পরিচালনা করায় জনমানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য সকলেই‘এসিল্যান্ড আপা’ নামেই চিনতো বলে জানা গেছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। জামালপুরবাসীর কাছে সাহসী নারী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মাহমুদা বেগম বর্তমানে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কেন্দুয়ার সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন ও জনমানুষের আস্থা অর্জনে লক্ষে ছুটে চলা শুরু করেছেন। তিনি যেভাবে জামালপুরের মানুষের কাছে প্রিয় ‘এসিল্যান্ড আপা’ হিসেবে ভালবাসা পেয়েছিলেন ঠিক তেমনি আগামীদিনে কেন্দুয়াবাসীর মনের মণি কোঠাঁয় স্থান করে নিয়ে প্রিয় হয়ে উঠতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কাজের মাধ্যমে সর্বমহলের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে- জামাল পুরে এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে মাহমুদা বেগমকে মোকাবেলা করতে হয়েছে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসকে। তখনকার সময়ে সাড়ে তিন বছরের জমজ ও ৮ মাসের শিশু সন্তান ঘরে রেখে,নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা যুদ্ধে নেমেছিলেন মানুষের জীবন বাঁচাতে। অংশ নিয়েছিলেন সচেতনমূলক নানা কার্যক্রমে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণি আদালত চালিয়ে করেছিলেন জরিমানা-কারাদণ্ড।
মানবতার ফেরিওয়ালা করোনাকালের বন্যা কবলিত বানভাসীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন খাদ্য সামগ্রী। করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তখনকার সময়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন ও ১৪ দিন আইসোলেশন মিলে ২৮ দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে জয়ি হন। হোম কোয়ারেন্টেইনে থেকে সুস্থ হন। তারপরও দমে যান নি তিনি। পূণরায় ছুটে চলেছিলেন পথে প্রান্তরে; যেখানেই অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা প্রতিবন্ধকতা সেখানেই সকল বাঁধা পেরিয়ে পালব করেছিলেন সাহসী ভূমিকা।
জানা গেছে-কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগমের গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার নকলা থানার পাঠাকাঠা ইউনিয়নের দশকাহুনিয়া গ্রামে। ২০০৪ সালে শেরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন ২০০৬ সালে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (সম্মান) প্রথম শ্রেণিতে, ২০১২ সালে এমএ প্রথম শ্রেণিতে পাস করেন। ২০১৩ সালে ৩৪তম বিসিএসএ উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালে সিলেটে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগদান করেন।
গনমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গেছে পরবর্তীতে মাহমুদা বেগম জামালপুর সদর উপজেলা এসিল্যান্ড পদে যোগদান করেন ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগে তিনি মেলান্দহে একই পদে কর্মরত ছিলেন। জামালপুর সদরে চাকরির মাত্র ৬ মাসেই ২০০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ প্রায় ৩০০টি অভিযান চালিয়েছিলেন তিনি।
জামালপুরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছেন শহরের বিভিন্ন স্থানে সরকারি জায়গায় থাকা অবৈধ স্থাপনা, অবৈধ বালু, অবৈধ ড্রেজার। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় অস্থিতিশীল নিয়ন্ত্রণ, সেখানকার সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে স্বার্থবাদী ভিত কাঁপিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
পরিশ্রমী ও সাহসী এই নারী কর্মকর্তা জামালপুরে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে নজির স্থাপন করেছিলেন।
নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম আগামীর সুন্দর কেন্দুয়া বিনির্মাণে স্বচ্ছতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবেন-এমনটাই প্রত্যাশা করেন কেন্দুয়াবাসী।
কেন্দুয়ার সামগ্রিক দৃশ্যমান উন্নয়নের লক্ষে নেত্রকোনা-৩ ( আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলে সঠিক দিক নির্দেশনা ও কেন্দুয়ার সকল স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে সঠিক সমন্বয় করে অগ্রসর হলে জামালপুরের মতই কেন্দুয়াবাসীর হৃদয়ে ইউএনও মাহমুদা বেগম আরও বেশী ঠাঁই করে নিতে পারবেন বলে সুশীল সমাজের বিশ্বাস।
কেন্দুয়ার সচেতন মহলের দাবী-গনমাধ্যম কর্মী,মানবাধিকার ও সমাজকর্মীদের প্রত্যেকের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে কেন্দুয়াবাসীর কল্যাণে কাজ করে আগামীদিনে উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন ইউএনও মাহমুদা বেগম।
কেন্দুয়ার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা-আগামী প্রতিটি কাজে যাচাই বাছাই ব্যতীত কোন কুচক্রী মহল বা স্বার্থান্বেসী ব্যাক্তি বিশেষ দ্বারা অথবা কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে-ন্যায়ের পথে-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেন্দুয়ার আপামর মানুষের ভালবাসা নিয়ে সকল ভালো কাজ করে এগিয়ে চলবেন কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগম। আগামীদিনে কর্মগুনে গুণান্বিত হয়ে কেন্দুয়ার জনমানুষের কাছেও ব্যাপক নন্দিত ও প্রশংসিত হবেন- ইউএনও মাহমুদা বেগমের নিকট কেন্দুয়াবাসীর এমনটাই প্রত্যাশা।