বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়াসহ স্থানীয় জনগণের আন্দোলন এবং বিভিন্ন আবেদন-নিবেদনের পর অবশেষে ধ্বংসপ্রায় ‘বেতাই নদী’ পুরুদ্ধার করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন খন্দকার এলাকার লোকজন ও সাংবাদিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে বেতাই নদীর সাইনবোর্ড স্থাপন করেন।
প্রাকৃতিক জলাধার নদীকে নদী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান জানান, এর মাধ্যমে স্থানীয় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে এ রকম জলাধারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ভূমি অফিসের কাগজপত্র অনুযায়ী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেতাই ‘নদী’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। যদিও সেটি দখল ও ভরাট হতে হতে সরু খালে পরিণত হয়েছে। এই সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বেতাইকে ‘নদী’র পরিবর্তে ‘খাল’ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছিল। বিষয়টি নজরে এলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন অফিস থেকে নদী পুনরুদ্ধারে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুসারে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে বেতাই নদীর কাগজপত্র যাচাই করে নদীর নামটি পুনঃস্থাপন করা হয়।
কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ও রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতাইকে ‘খাল’ হিসেবে দেখিয়ে ১১ কিলোমিটার জুড়ে খনন প্রকল্প চলছে। কিন্তু স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নদী কমিশন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বেতাই খাল’কে প্রকৃত ভূমি রেকর্ড অনুযায়ী ‘বেতাই নদী’ হিসেবে পুনঃস্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বেতাই নদী কীভাবে খালে পরিণত হলো – সে রেকর্ড যাচাই করা হয় এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কীভাবে নদীকে খাল বানানো হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হয়। নতুনভাবে এই প্রজেক্টের নামও সংজ্ঞায়িত করা হবে।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী বেতাই নদীকে খাল দেখিয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে ২০২০-২১ অর্থবছরে খাল খনন, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ চলছে। ১১ কিলোমিটার খননে ১৬টি প্যাকেজের আওতায় মোট বরাদ্দ দুই কোটি আট লাখ টাকা। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।
ইতিহাস বিকৃত করে বেতাই নদীকে খাল দেখানো এবং খননকাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এলাকাবাসী স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক অভিযোগপত্র দেন। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল বেতাই নদীর নাম পরিবর্তন করে খাল খননের প্রকল্প এনে নামকাওয়াস্তে মাটি কেটে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।