নেত্রকোণায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোণা মূলত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও ধান উদ্বৃত্ত জেলা। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের সোনালী শীষে ভরে গেছে কৃষকের খেত। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক মুখরিত। কৃষাণ কৃষাণীরা ধান কাটা, মাড়াই, সিদ্ধ দেয়া, শুকানো ও গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ধান কাটা ও মাড়াই কাজে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে দিন মজুরদেরও।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে আমন চারা লাগাতে দেরি হলেও পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
সংসারের সারা বছরের খোরাকী, গরুর খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা পূরণ ও ধানের দাম ভালো পাওয়ায় চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোণা সদরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাড়ীতেই দাম বেশী পাওয়ায় আমরা আনন্দিত।
কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া জানান, আমি এবার ২০ কাটা জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রতি কাঠায় ৫ মনের বেশী করে ফলন পেয়েছি। প্রতি মন ধান ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। এতে আমরা খুশি।
আরো কয়েক জন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সার ডিজেলের কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে কৃষকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার যদি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ১৫০০ টাকা মন দরে ধান কিনত, তাহলে কৃষকরা আরো বেশী করে ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠতো।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যারা আগাম জাতের আমন ধান লাগিয়েছিল, তারা প্রায় ১৫/২০ দিন আগেই তাদের ধান কেটে পেলেছে। তারা ওই জমিতে বাড়তি ফসল হিসাবে সরিষা চাষ, আলু, বেগুনসহ শীতকালীন সবজি আবাদ করতে পারবে। যা পরবর্তী সময়ে বোরো ধান চাষের অর্থের জোগান দিবে। কৃষকরা দিন দিন স্বল্পকালীন সময়ে আগাম জাতের আমন ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৩
হাজার ৭৫ হেক্টর জমি। চাল উ পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫ শত ৯৬ মেট্রিক টন।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, জেলায় আমন ধানের উ পাদন ভালো হয়েছে। আগাম জাতের ধান কেটে একই জমিতে সরিষা, আলুও শাক সবজি চাষ করায় কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ বয়ে নিয়ে আসবে। আবার সরিষা ও শাক-সবজির আবাদ ঘরে উঠিয়ে একই জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা যাবে। এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।