নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ছদ্মবেশে অটোরিকশা চালক সেজে থাকা অজ্ঞান পার্টির চার সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বীর বাদশাগঞ্জ এলাকার মো. সোহেল মিয়া (২২), মো. সিরাতুল ইসলাম (৩৫), মাটি কাটা গ্রামের হারিছ মিয়া (৫০) ও আবু তাহের (৩৫)।
এ ঘটনায় রবিবার মোহনগঞ্জ উপজেলার মানশ্রী গ্রামের ভুক্তভোগী মোছা. কুলসুমা আক্তার বাদী হয়ে ওই চারজনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মোহনগঞ্জ থানার পুলিশ মামলার প্রেক্ষিতে আটক চারজনকে নেত্রকোনা কোর্টে প্রেরণ করে। এর আগে শনিবার রাত ভর অভিযান চালিয়ে জেলার মোহনগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করা হয়।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, কুলসুমা আক্তার তার কণ্যা শিশুকে নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর সকালে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের বিএনপি মোড় থেকে মানশ্রী যাওয়ার জন্য
একটি অটোরিকশায় উঠে। একটু সামনে যাওয়ার পর উক্ত অটোতে আরও তিন-চারজন উঠেন। পথে মাইলোড়া মাঠের কাছে গিয়ে একটি কাগজে কিছু লিখা পড়তে তার হাতে দেন অটোচালক। লাল কালিতে লেখা ওই কাগজটি খুলে পড়তে গিয়ে কুলসুমা অজ্ঞানের মতো হয়ে যান। তারপর থেকে সবকিছু দেখতে, শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল, কিন্তু কিছুই বলতে বা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা তার কানে থাকা স্বর্ণের দুল, হাতের বালা ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়।
তিনি দেখেও তা প্রতিবাদ করতে পারেননি। পরে তাকে এমন অবস্থায় মাঠের কোণে নামিয়ে রেখে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।স্থানীয়রা কুলসুমাকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। পরে সুস্থ্য হয়ে কাউকে কিছু না বলে এমনকি থানা পুলিশকেও ঘটনা না জানিয়ে নিজেই ওই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খুঁজতে থাকেন কুলসুমা।
মাস খানেক আগে একদিন চক্রের একজন সদস্যকে বাজারে দূর থেকে দেখতে পেলেও সে কৌশলে পালিয়ে যায়।
এভাবেই ছিনতাইকারীদের পিছনে লেগে থেকে কুলসুমা গতকাল শনিবার দুপুরে পৌরশহরের গোডাউন মোড়ে সেই অটোচালককে দেখে ফেলেন। অটোচালক কুলসুমাকে দেখে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় তাকে ধরে পুলিশে খবর দেন। তখন সবার সামনে তার নাম মো. সোহেল মিয়া ও ঠিকানা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বীর বাদশাগঞ্জ বলে জানায়। পরে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসবাদে আটক চালক ঘটনা স্বীকার করলে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে চক্রের অপর সদস্যদের আটক করে।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সোহেল মিয়াকে আটকের পর তার দেয়া তথ্যে অপর তিনজনকে আটক করি। তবে এ চক্রের আরেক সদস্য বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামের সাইকুলকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সে পুলিশের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে গেছে। তবে তাকে ধরতেও অভিযান চলছে।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে আটক ব্যক্তিরা অজ্ঞান পার্টির সদস্য বলে জানিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এভাবে অটোরিকশার চালক সেজে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকানার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীদের টার্গেট করে অজ্ঞান করে ছিনতাই করতো।
আটক চারজনকে ওই নারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।