নেত্রকোণার আটপাড়ায় ক্লুলেস অটোরিকশা চালকের হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ছিনতাইকৃত অটোরিকশা উদ্ধার এবং হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট ৩ আসামীকে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া এবং সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ।
র্যাব-১৪ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি মারফত জানান, গত ৭ মার্চ সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টার দিকে আটপাড়া উপজেলার শুনই ইউনিয়নের ভুরভুরিয়া গ্রামের জনৈক সুলতু মিয়ার ডোবা জমিতে অজ্ঞাতনামা একটি লাশ দেখতে পেয়ে এলাকার লোকজন থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রির্পোট তৈরী করার পর ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। আটপাড়ায় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সুন্দাইল গ্রামের মৃত আরব আলীর পুত্র দুই দিন ধরে নিখোঁজ মোঃ কাইয়ুম (২৯) এর বড় ভাই মোঃ শাহ্জাহান (৩৬) পরিবারের অন্যান্য লোকজনকে নিয়ে এসে এটি তার ছোট ভাই নিখোঁজ কাইয়ুমের লাশ হিসেবে সনাক্ত করে।
পরে নিহতের বড় ভাই মোঃ শাহ্জাহান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আটপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, নিহত কাইয়ুম (২৯) গত ৫ মার্চ সকাল অনুমান সাড়ে ১০ টার দিকে অটোরিক্সা নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়ে যায়। রাতে কাইয়ুম বাড়ী না ফেরায় এবং তার মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় পরিবারের লোকজন চার দিকে খোজাঁখুজি শুরু করে। তদন্তের সূত্র ধরে র্যাব-১৪ একটি টিম গত ৯ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থেকে হত্যাকান্ডের মূলহোতা মোঃ বাবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে, সে সহ আরো ২/৩ জন আসামী ভিকটিম কাইয়ুমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মোঃ বাবুল মিয়া সহ আরো ২/৩ জন আসামী ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি পাশ^বর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মোঃ নিজাম উদ্দিনের পুত্র মোঃ ইয়াছিন মিয়ার (২৯) কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ইয়াসিন আবার এই অটোরিকশাটি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভাটিলালপুর গ্রামের সুমন মিয়ার পুত্র মোঃ ফাজিল মিয়ার (৩৫) কাছে ৫৫হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ফাজিল উক্ত অটোরিক্সা একই উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মহাজ উদ্দিনের পুত্র আমির হোসেনের (৩৩) কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আমির উক্ত অটোরিকশাটি পুণরায় কিবরিয়ার (৩২) নিকট ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
র্যাব-১৪ এর চৌকস আভিযানিক দলটি চাঞ্চল্যকর এই ক্লুলেস কাইয়ুম হত্যাকান্ডটির রহস্য উদঘাটন এবং ধৃত আসামী মোঃ বাবুল মিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থেকে আসামী ইয়াছিন মিয়াকে এবং জামালগঞ্জ থেকে আসামী মোঃ আমির হোসেনকে (৩২) গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আমির হোসেনের দেয়া তথ্য মতে একই উপজেলার কিবরিয়ার দোকান হতে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত মোঃ বাবুল মিয়া এবং ইয়াছিনের নামে আরো অটোরিকশা চুরিসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে কাইয়ুম হত্যাকান্ডের সাথে তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আজ শুক্রবার বিকালে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।