নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অত্যাধুনিক সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানী খরচের ভুতুড়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। বিল ভাউচারে যে পরিমাণ জ্বালানী খরচ দেখানো হয়েছে, তা বাস্তবতার সাথে মিল নেই। হাসপাতাল রেজিস্ট্রার অনুযায়ী এম্বুলেন্সের মাধ্যমে বহন করা হয়েছে মর্মে যে সংখ্যক রোগী দেখানো হয়েছে। সে অনুযায়ীও মিলছে না পেট্রোলের হিসাব। অনুসন্ধানে গত জুলাই ও আগষ্ট মাসের বিল ভাউচার ও হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে গত ২ আগষ্ট হাসপাতাল থেকে রেফার্ড কৃত এক রোগীকে বহন করার সময় একই এম্বুলেন্স হাসপাতালে দুইজন স্টাফ ময়মনসিংহ যায়। পরবর্তীতে একই দিনে রেজিস্ট্রারে আলাদা ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় সরকারী কাজে এম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। যা রীতিমত অবাক করার মত বিষয়। উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে অত্যাধুনিক এ নতুন অ্যাম্বুলেন্সটি সরকারিভাবে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা হয়। এরপর থেকে উপজেলার একমাত্র এ অ্যাম্বুলেন্সটির মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে নেত্রকোনা- ময়মনসিংহ রোগীদের বহন করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অথচ হাসপাতালে কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা এই এ্যাম্বলেন্সের জ্বালানী খরচ নিয়ম বহিভূর্ত ভাবে ইচ্ছে মাফিক বিল ভাউচার তৈরীর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গত জুলাই মাসে মোনাকো ইন্টারন্যাশনাল লিঃ এর ভাউচারের মাধ্যমে জ্বালানী তৈল সরবরাহের বিল বাবদ ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৫ শত ৫৯ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একইভাবে আগষ্ট মাসে ২ লক্ষ ১০ হাজার ৫ শত ৩৪ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উভয় বিল ভাউচার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তার স্বাক্ষরে পাস করা হয়েছে। সূত্র মতে জুলাই মাসে মোট ৬৩ জন রোগী কে বহন করা হয়েছে এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে এবং অনু্যায়ী ময়মনসিংহ যাওয়া আসায়া ২৮ লিটার তৈল ব্যবহৃত হয়। সে অনু্যায়ী জুলাই মাসে মোট ১৭৬৪ লিটার জ্বালানী তৈল ব্যবহৃত হওয়ার কথা অথচ বিল ভাউচারে ২২৬৮ লিটার জ্বালানী তৈল ৮৯.৭৫ টাকা ধরে দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। বাকী ৫০৪ লিটার তৈল কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এর সদুত্তর কে দেবে? এ কেমন ভুতুড়ে বিল? একই ভাবে রেজিস্ট্রারের সাথে অসংগতি রেখে আগষ্ট মাসে ২১৪২ লিটার জ্বালানী তৈল সরবরাহের বিল উত্তোলন করা হয়েছে। অনুসন্ধ্যানে আরও অন্যান্য বিষয়ো ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। যা উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ সহ দ্বিতীয় পর্বে উপস্থাপন করা হবে।
দুই মাসের বিল ভাউচারে এমন অসংগতি তাহলে বছরের পর বছর প্রতিমাসের সকল বিলের অসংগতি নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল!
এ বিষয়ে ১ নভেম্বর দুপুরে মুঠোফোনে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- এম্বুলেন্সের জ্বালানী খরচের ভুতুড়ে বিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে লিখিতভাবে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে জানান, তদন্তের চিঠি হাতে পেয়ে রেজিস্ট্রার তলব করা মাত্র জ্বালানী খরচের বিল ভাউচারে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ থেকে সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। আমরাও চাই দোষীদের উপযুক্ত বিচার হোক । তিনি আরও জানান-আজ আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন।৷ ( ধারাবাহিক প্রতিবেদন – চলবে)